ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সায়ন্সেস - ডিআইএসএস
ফোস্টার পেরেন্টস কেয়ার
নীতিমালা
ভূমিকাঃ
এই পৃথিবীতে, প্রতিটি শিশুর অধিকার রয়েছে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার। সমাজে সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা মৌলিক চাহিদা বঞ্চিত হয়েই বড় হচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর সংখ্যাও অনেক, যারা ভাগ্য বিড়ম্বিত এবং অভিভাবকহীন হয়ে পথে ঘাটে অত্যন্ত মানবেতর ও নিরাপত্তাহীন জীবন যাপন করে করে। এদের অনেকেই স্বপ্ন দেখে লেখাপড়া করে বড় হবে মানুষের মত মানুষ হবে। যে বয়সে তাদের খেলতে যাবার কথা সেই বয়সে তারা হয়তো পরিবারে ছোট ভাইটার মুখে খাবার তুলে দেবার ব্যবস্থা করতে ব্যস্ত। সমাজের এইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পূনর্বাসনের কথা চিন্তা করে, তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে এবং অসহায় দুস্থ শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তাদের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করার জন্য ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন (রেজিঃ নং- এস-৪৩০২ (৪০৪) /০৪ ড্যাফোডিল ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল সায়ন্সেস - ডিআইএসএস প্রতিষ্ঠা করছে যা ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ড্যাফোডিল ফাউন্ডশেন এর সার্বিক সহায়তায় এবং ভারতের উড়িষ্যার “কলিঙ্গ ইন্সস্টটিউিট অব সোশ্যাল সায়ন্সেসে - কেআইএসএস” এর কারিগরি সহায়তায় পরিচালিত হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে এর দীর্ঘমেয়াদী এবং সুদূরপ্রসারী কার্যক্রম অব্যহ্যত রাখার লক্ষ্যে আমরা শিশুদের জন্য “ ফস্টার প্যারেন্ট” বিষয়টি নিয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
লক্ষ্যঃ
ফস্টার কেয়ার কার্যক্রমের একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো অভিভাবকবিহীন শিশুর আইনত অভিভাবকত্ব বা সঠিক ফোস্টার পরিবার মনোনয়ন করা এবং নিঃসন্তান দম্পতি কতৃক পরিবার ও গৃহহীন শিশুর দায়িত্ব নেওয়া।
উদ্দেশ্যঃ
আমরা জানি শিশুরাই আগামী দিনের জাতির কর্ণধার। কেবলমাত্র একজন শিশু একটি পরিবার এবং পারিবারিক পরিবেশ কিংবা আইনগত অভিভাবকের স্নেহ পাবে, বাকিরা তা থেকে বঞ্চিত হবে তা নয়। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে
ডিআইএসএস এ থাকা অভিভাবকহীন শিশুর জন্যও অন্য শিশুদের মত একই রকম স্নেহ ভালবাসা এবং পারিবারিক পরিবেশ নিশ্চিত করা।
কিছু সম্মানিত নিঃসন্তান দম্পতি যাদের একটি সন্তানের জন্য প্রবল আকুতি কিংবা একটি অসহায় শিশুর দায়িত্ব নিতে চায়। তাদের সদিচ্ছার বাস্তবায়ন করা
প্রতিটি সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে একটি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়ে
শিশুটি যেন কখনো নিজেকে এতিম, অসহায় না ভাবে, এবং পারিবারিক স্নেহবলয়টি অনুভব করতে পারে, সেক্ষেত্রে তার জন্য একটি নিরাপদ পরিবার এবং পারিবারিক পরিবেশ নিশ্চিত করে দেওয়া।
ফোস্টার পেরেন্টস কেয়ারের বা শিশুর আইনগত অভিভাবকত্ব প্রদানের নীতিমালাঃ
ডিআইএসএস অভিভাবকহীন শিশুর আইনগত অভিভাবকত্ব বা ফস্টার ফ্যামিলি করার জন্য সঠিক পরবিার মনোনয়ন
শিশু পুনর্বাসনের জন্য সক্ষম পরিবারে শিশুকে আইনী অভিভাবকত্ব / ফস্টার কেয়ারের জন্য প্রদান করা যাবে। তবে শিশু ডিআইএসএস হোস্টেলে থেকে তার সার্বিক শিক্ষা এবং মেধার বিকাশ হবে এইমর্মে আবেদনের প্রেক্ষিতে ফোস্টার কেয়ারের জন্য পরিবার নির্বাচন করা হবে। আইনী অভিভাবক কর্তৃক শিশুর যাবতীয় ব্যয়ভার সংশ্লিষ্টরা বহন করবেন ডিআইএসএস এর প্রকৃত ব্যয় ও বিশ্লেষণ অনুযায়ী। এটি বার্ষিক বা মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে।
শিশু বছরে বিশেষ দিনগুলোতে ফোস্টার পরিবারে বেড়াতে যেতে পারবে ডিআইএসএস শিশু ছুটির নিয়ম অনুযায়ী। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডিআইএসএস শিশু সুরক্ষা নীতিমালা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। শিশু সুরক্ষা নীতিমালা বহির্ভূত ভাবে কোন আচরণ সংঘটিত হলে ডিআইএসএস কর্তৃপক্ষ যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য থাকবেন। এতে ফস্টার পরিবার কোন প্রকার আপত্তি করতে পারবেন না।
পরিত্যক্ত শিশুদেরকে প্রথমে নিজ পরিবারের সন্ধান করে তাকে আইনী প্রক্রিয়ায় হস্তান্তর করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিভাবকত্ব নিতে আগ্রহী পরিবারে শিশু হস্তান্তর করার ক্ষেত্রে শিশুর সংখ্যার উপর ভিত্তি করে অভিভাবকত্ব নিতে ইচ্ছুক দম্পত্তি খুঁজে বের করে যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এই যাচাই করার ক্ষেত্রে যেসব বিবেচ্য বিষয় থাকবে, তা হলোঃ
পরিবার যথেষ্ট সচ্ছল কিনা
স্বামী স্ত্রী উভয়ে উচ্চ শিক্ষিত কিনা (কমপক্ষে উভয়ে স্নতক পাশ)
এইরূপ দম্পতি হলে প্রাথমিক আবেদন করার পর সমাজকর্মী পরিবার ভিজিট করে প্রতিবেদন দিবেন। তারপর ডিআইএসএস কমিটি তা যাচাই বাছাই করে দেখবেন এবং সবকিছু ঠিকভাবে পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পাওয়ার পর শিশুর মেডিকেল পরীক্ষা করে শিশু ফস্টার ফ্যামিলিকে প্রদান করা হবে। এখানে সকল গোপনীয়তা শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এবং দেশের প্রচলিত আইনের সাথে সংগতি রেখেই শিশুকে ফোস্টার পরিবারে হস্তান্তর করা হবে।
শিশু হস্তান্তরের সময় ”ডিড অব এগ্রিমেন্ট” এবং হলফনামা সম্পন্ন করে নোটারি এফিডেভিড করা হবে। পরে ছয়মাসের মধ্যে একাধিকবার পরিবারটিতে শিশুর সুরক্ষা পরিস্থিতি পরিদর্শন করে প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে উপপরিচালক ”অনাপত্তি” পত্র প্রদান করবেন। সবশেষে উক্ত দম্পতিকে শিশুর অভিভাবকত্ব প্রদান করা হবে।
ফস্টার পরিবার হবার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শর্তাবলীঃ
ফস্টার পরিবার হিসেবে অবশ্যই নি:সন্তান পরিবার হতে হবে।
একটি নি:সন্তান পরিবারের জন্য একজনের বেশি শিশুর অভিভাবকত্ব দেয়া হবে না
প্রবাসী দম্পত্তিকে ফস্টার পরিবার হিসেবে আদর্শ বলে বিবেচনা করা হবে না এবং শিশুর অভিভাবকত্ব দেয়া যাবে না। (পরবর্তী নির্দেশনা বা পলিসির সংশোধন না আসা পর্যন্ত)
ক্ষেত্রবিশেষে কর্তৃপক্ষ যদি দেখেন যে দম্পতি স্থায়ী ভাবে প্রবাসে থাকবে না সেক্ষেত্রে তাদের আবেদন বিশেষ বিবেচনায় আনা হবে।
শিশু হস্তান্তর সম্পর্কিত পলিসির বাইরে কোন বিষয় দেখা দিলে গভর্নিং বডি’র অনুমোদন নিতে হবে।
প্রচলিত আইনে পালক বা দত্তক গ্রহণের কোন সুযোগ নেই তবে অভিভাবকত্ব গ্রহণ বা প্রদানের বিষয়টি আইন সিদ্ধ।
একারণে কেন্দ্রের পরিত্যক্ত শিশুকে কোন পরিবারে হস্তান্তর করলে এইসকল আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। অর্থ্যাৎ অভিভাবক ও প্রতিপাল্য আইন-১৮৯০ এর ৭ ও ৮ ধারা মোতাবেক আদালতে আবেদনের মাধ্যমে শিশু গ্রহণ কারী পরিবার/দম্পতিকে অভিভাবকত্ব গ্রহণ উক্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।
উপসংহার:
শুধুমাত্র সামাজিক দায়বদ্ধতাই নয় , নাগরিক দায়িত্ব ছাড়াও মহান পালনকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনও আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। শিশু অধিকার সনদের ২০(১) ধারায় “ পারিবারিক পরিবেশে থেকে যে শিশু সাময়িক বা চিরতরে বঞ্চিত বা র্স্বাথরক্ষায় যে সকল শিশুর পারিবারিক পরিবেশ উপযুক্ত নয় সে সকল শিশু রাষ্ট্র থেকে সুরক্ষা ও সহায়তার অধিকারী। তাই আমরা সবসময় চাই, সুবিধাবঞ্চিত শিশুরাও পারিবারিক স্নেহময় পরিবেশে নিরাপদে বেড়ে উঠুক। সকল প্রকার বঞ্চনায় বঞ্চিত হয়ে যেন এসব শিশুরা নিজেদের উপর বিশ্বাস হারিয়ে ভুল পথে পা না বাড়ায়, সেই উদ্দেশ্যেই আমাদের ড্যাফোডিল ইন্সিটিউট অব সোশ্যাল সাইন্সেস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়াএবং তাদেরকে ভাল মানুষ হিসেবে, যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আমাদের এগিয়ে যাওয়া।
(প্রতি বছর আমাদের বার্ষিক খরচ, প্রশাসনিক ও একাডেমিক বিভিন্ন কাজ ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজনের ভিত্তিতে আমাদের এই নির্দেশিকাটি সংশোধন এবং পরিমার্জন করা হবে।)